টুকরো গল্পে টুকরো জীবন

সব সকাল সুন্দর হয়না।কিছু সকাল থাকে আলাদা ।অন্যরকম।দুপুরের রুক্ষতা তাকে ভাঙতে পারে না।আবার অনেক সুন্দর সকাল বড় এলোমেলো হয়ে যায় সময় গড়ানোর সাথে সাথে। জীবনের শুরুটা দেখে তাই জীবনের সবটুক জানা হয় না।“মর্নিং সোজ দ্য ডে” দিনের জন্য লাইনটা যতটা কার্যকরী জীবনের জন্য বোধ হয় অতটা  নয়।

কানাই নামে কলেজ জীবনে আমার এক বন্ধু ছিল।অসম্ভব সরল আর সাধারন ছিল মুখটা।আমরা কানাইদা বলে ডাকতাম। কলেজ পেরিয়ে কানাই খুলনা বিআইটিতে সুযোগ পেল।আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে।ধরেই নিয়েছিলাম ও প্রকৌশলী হবে।অনটনের  সংসারে কানাইদার জন্ম।এত অভাব অনটনের মধ্যেও ও বিআইটিতে সুযোগ পেল নিজের মেধার সীমাবদ্ধতার জন্য নিজের উপর রাগ হত,তবু হিংসে হয়নি কোনদিন বরং কানাই প্রকৌশলী হবে ভেবে ভালই লাগত।পরিবারের আর্থিক অনটন নিরসন হবে।বড় হয়ে অনেক টাকা রোজগার করবে।কিন্তু সকাল সব সময় ঠিক বলেনা।সব সুন্দর আর সম্ভাবনার গ্যারান্টি দেয় না।অথবা সব সকালের সৌন্ধর্য্য আমরা দুপুর অবধি টেনে নিতে পারিনা।কানাই পড়ালেখার খরচ চালাত প্রাইভেট পড়িয়ে।কয়েকবছর পর দেখা হল শুনলাম লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে।জিজ্ঞেস করি কেন ?হতাশার সুর ছিল কথায় তবু হাসতে হাসতে বলে
-টাকার সমস্যাতো ছিলোই তুমি জানো,তার চাইতে বড় সমস্যা হয়ে দাড়ালো প্রেম আর বিয়ে ।
তখন আমার মাস্টার্স শেষ হয়নি।হাসির ছলে বলি

-তুমি বিয়ে করেছ কানাইদা ? বেশ করেছ।পড়ালেখায় মজা নেই বিয়ে হলো পুরোটাই মজার । 
ওর মুখটা চুপসে গেল। বুঝলাম আমার রসিকতা ওকে উৎফুল্ল করেনি।আমিও থেমে গেলাম। তারপর আস্তে আস্তে বল্লো

-বিয়েটা হয়েছিল ঠিকই।বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলাম যদিও কিন্তু.

আমি বলি কিন্তু কি?

-বিয়েটা টেকেনি।নানান জটিলতায় ভেঙ্গে গেছে সে সংসার।

আমার মুখে শব্দ নেই তখন ।কি বলব মাথায় আসছে না।বিয়ে নিয়ে অনেক ভাবনা আসে মাথায় তখন।ঐ বয়সে প্রেম রোমান্সের জন্য তৈরী থাকা যায় কিন্তু বিয়ে, বউ ,সংসার তারপর বিচ্ছেদ ? ভেঙে যাওয়া নিয়েতো কখনো ভাবিনি।শুরুর পুর্বেই ভেঙে যাওয়া নিয়ে ভাবার সময় সত্যি ওটা নয়।বুঝতে বাকী রইল না যে প্রেম আর অসময়ের সেই বিয়ে ও বিচ্ছেদ জনিত অযাচিত হাজার ধকলে কানাইদার সকালের সম্ভাবনা দুপুর না হতেই মিলিয়ে গেছে।বাধা পায় আলাপচারিতা।ভারী হয়ে উঠে কথোকপথোন। একটু শান্ত হলে জিজ্ঞেস করি 
-এখন কি করবে ? 
-জানিনা বলে থেমে গেল কানাই।
আমিও থেমে গেলাম কি বলব ভেবে না পেয়ে।অনেক বছর পর জেনেছি কানাইদা গ্রাজুয়েশান করে মাধ্যমিকের শিক্ষক হয়েছে ।আমি জানি ও ভালো শিক্ষক হবে ।অন্য অনেক শিক্ষকের চাইতে ওর মেধা আর অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের অনেক উপকারে আসবে।গত কয়েক বছরে অনেকবার দেখা হয়েছে,ফোনে কখা হয়েছে কিন্তু ওর পরবর্তী বৈবাহিক জীবন নিয়ে কিছু প্রশ্ন করার সাহস আমার আর  হয়নি ।


No comments: